Thursday, March 14, 2013

অর্থনীতি ২য় পত্র : সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

এইচ এস সি পরীক্ষা ২০১৩
অর্থনীতি ২য় পত্র( সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর)


প্রশ্ন ১ : অর্থ কাকে বলে?

উত্তর : সাধারণত বিনিময়ের মাধ্যমকেই অর্থ বলা হয়। অর্থ একটি বিনিময়ের মাধ্যম যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, যা দ্বারা দ্রব্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় এবং সব ধরনের লেনদেন সম্পাদন করা যায়। মোটকথা যা বিনিময়ের মাধ্যম, সঞ্চয়ের ভাণ্ডার, মূল্যের পরিমাপক হিসেবে কাজ করে, তাকেই অর্থ বলে। 
বিভিন্ন দেশে অর্থকে বিভিন্ন নামে অবহিত করা হয়। যেমন_ বাংলাদেশে টাকা, জাপানে ইয়েন, যুক্তরাজ্যে পাউন্ড স্টার্লিং এবং আমেরিকায় ডলার। অর্থনীতিবিদ কোলের ভাষায়, 'অর্থ এমন একটি জিনিস যা সবাই সাধারণভাবে দেনা-পাওনা মেটাতে এবং ঋণ পরিশোধ করতে ব্যবহার করে।' অর্থনীতিবিদ ওয়াকারের মতে, 'অর্থের কাজ দ্বারাই অর্থের পরিচয় পাওয়া যায়।'
সুতরাং বলা যায়, যে বস্তু বিনিময়ের মাধ্যম ও দেনা-পাওনা মেটানোর উপায় হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে, তাকেই অর্থ বলা হয়।



প্রশ্ন ২ : জাতীয় আয় কাকে বলে?
উত্তর : কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে কোনো দেশে যে পরিমাণ চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্য ও সেবা উৎপন্ন হয়, তার আর্থিক মূল্যের সমষ্টিকে জাতীয় আয় বলে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ নানা দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দিয়েছেন। 
অধ্যাপক পিএ স্যামুয়েলসন জাতীয় আয়কে একটি প্রবহমান ধারা হিসেবে অবহিত করেন। তার মতে, 'একটি দেশের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের বার্ষিক সর্বমোট প্রবাহের আর্থিক পরিমাপ হলো জাতীয় আয়।' এ সি পিগু জাতীয় আয়কে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফার সমষ্টি হিসেবে অবহিত করেছেন। অধ্যাপক হ্যানসনের ভাষায়, 'জাতীয় আয় হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হতে সংগৃহীত সব ব্যক্তিগত আয়ের সমষ্টি।'
উপরোক্ত সংজ্ঞা পর্যালোচনা করে বলতে পারি, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের জনগণের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ফলে মোট যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদিত হয়, তার আর্থিক মূল্যকে জাতীয় আয় বলে।

প্রশ্ন ৩ : অর্থের গুরুত্ব বর্ণনা করো ।
উত্তর : আধুনিক অর্থনীতিতে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থ যে কেবল বিনিময় প্রথার অসুবিধা দূর করেছে তা নয়, বরং সমাজের উৎপাদন, সঞ্চয়, ভোগ_বণ্টন সর্বক্ষেত্রেই অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 'অর্থের ব্যবহার ছাড়া আধুনিক সভ্যতার কথা চিন্তাও করা যায় না। 
অধ্যাপক মার্শালের মতে, 'অর্থকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক জগৎ আবর্তিত হয়।' আধুনিক অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি এবং আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে অর্থর্। আধুনিক অর্থনীতিতে বিনিময়, মূল্য পরিমাপ, মূল্য স্থানান্তর প্রভৃতি ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা অসীম। 
অর্থকে কেন্দ্র করেই বর্তমান অর্থনৈতিক জগৎ আবর্তিত হচ্ছে। ক্রাউথার যথার্থই বলেছেন, 'অর্থনীতিতে, সমাজ জীবনে, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত কার্যাবলির ক্ষেত্রে অর্থ একটি অনবদ্য আবিষ্কার, যাকে কেন্দ্র করে বাকি সবকিছুই প্রতিষ্ঠিত।' 
সুতরাং আধুনিক অর্থনীতিতে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশ্ন ৪ : অর্থ সরবরাহের উপাদানগুলো কী কী? 
উত্তর : অর্থের সরবরাহ ধারণাটি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অর্থের সরবরাহকে কেউ সংকীর্ণ পরিসরে বিবেচনা করেছেন। আবার কেউ কেউ বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থের জোগানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। সহজ কথায় সরকার কর্তৃক ছাপাকৃত নোট ও কয়েন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ছাপাকৃত নোটের সমষ্টি যা অনুমোদিত আকারে অর্থনীতিতে বিরাজমান, তাকেই অর্থের জোগান বলে। অর্থাৎ, অর্থের জোগানের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রা ও চাহিদা আমানত অন্তর্ভুক্ত। এদিক থেকে অর্থেও সরবরাহ বলতে নিম্নে বর্ণিত দু'টি উপাদানের সমষ্টিকে বোঝায় :
গঝ = ঈট + উউৃ.(১) 
এখানে,
গঝ = অর্থের সরবরাহ।
ঈট = জনগণের হাতের মুদ্রা।
উউ = চাহিদা আমানত।
ওপরের সূত্র অনুযায়ী অর্থের সরবরাহ বলতে জনগণের হাতের মুদ্রা, ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানতের সমষ্টিকে বোঝায়। অধ্যাপক মিল্টন ফ্রিডম্যান ও তার অনুসারীরা অর্থ সরবরাহ বলতে জনগণের হাতের মুদ্রা ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানত এবং মেয়াদি আমানতের সমষ্টিকে বোঝান।
গঝ = ঈট + উউ + ঞউৃ.(২) এখানে,
ঞউ = মেয়াদি আমানতের পরিমাণ।

প্রশ্ন ৫:জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি-সমূহ কী কী?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় জাতীয় আয়ের হিসাব নিরূপণ করা হয়, তাকে জাতীয় আয়ের পরিমাপ পদ্ধতি বলা যায়। সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপ করা হয়। যেমন_
উৎপাদন পদ্ধতি : এ পদ্ধতি অনুযায়ী জাতীয় আয় পরিমাপে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশে উৎপাদিত সব বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের আর্থিক মূল্যকে ধরা হয়।
আয় পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে উৎপাদন কাজে নিযুক্ত বিভিন্ন উৎপাদনের উপাদান এক বছরে যে অর্থ উপার্জন করে, তার সমষ্টিক পরিমাপ থেকে জাতীয় আয় পাওয়া যায়। 
ব্যয় পদ্ধতি : ব্যয় পদ্ধতি অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সমাজের সব ব্যয়ের যোগফল থেকে জাতীয় আয় পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৬ : অর্থের কার্যাবলি উল্লেখ কর ।
উত্তর :বর্তমান বাস্তবতায় বিশ্বব্যাপী অর্থ একটি অপরিহার্য উপাদান। অর্থ মানুষের জীবনে সাধারণত তিন ধরনের কার্য সম্পাদন করে থাকে। যেমন : 
ক. বাণিজ্যিক কার্যাবলি।
খ. সামাজিক কার্যাবলি এবং
গ. মনস্তাত্তি্বক কার্যাবলি।
......

No comments:

Post a Comment